ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে আলেম ওলামাদের কাজ করতে হবে: এ এম এম বাহাউদ্দীন
১১ জুন ২০২৩: দেশের আলেম-ওলামাদের ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এবং মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, সমাজ এখন ড্রাগস, নানাবিধ পাপাচার, লোভ-লালসা, দুর্নীতিতে সয়লাব হয়ে গেছে। কারণ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এখন যারা আছেন, অতীতে যারা ছিলেন কেউই সমাজ গঠনে কাজ করেননি। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য যে রাজনীতি করা দরকার সেটা করেছেন। তাই এই কাজটি দেশের আলেম-ওলামাদেরই করতে হবে। কারণ তাদের প্রভাব প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি গ্রামে-শহরে, দেশের কোটি কোটি মানুষ তাদের অনুসারী, আগামী দিনের সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে তাদেরকেই ঘরে ঘরে মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চাঁদপুর জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আমরা বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু ত্বরিকা-তাসাউফ, সমাজ গঠনের কথা বলি না। ইসলামী সমাজ, ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ যদি গঠন না হয় তাহলে মাদরাসার শিক্ষার্থী বৃদ্ধি হবে কিভাবে? বর্তমান সমাজে এখন পিতা-মাতারা নানা কারণে বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে আলেমদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। ইসলামী সমাজ গড়ার মনোবৃত্তি বৃদ্ধি করতে হবে। আগামী দিনের সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে ঘরে ঘরে মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন দাবি-দাওয়া, বেতন-ভাতা আদায়ের জন্য কাজ করে না। এটি একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন। সারাদেশের আলেম-ওলামাগণ এর সঙ্গে আছেন, পেছনে আরো অসংখ্য মানুষ সম্পৃক্ত আছেন। আমরা শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল থাকতে চাই। রাষ্ট্র যাদের প্রয়োজন মনে করে ডাকবে তারা কাজ করবেন। কোন কিছুতে বিভ্রান্ত হবেন না, কাজ করে যান।
https://www.facebook.com/BJM1937/videos/6947995945227926
সামনে সুদিন আসছে জানিয়ে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আগামীতে আপনাদের (আলেম-ওলামা) গুরুত্ব বাড়ার কোন বিকল্প নেই। যারা নিজে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের জন্য সমাজকে দুষিত করতে সহযোগিতা করছেন, তারা নিজেরাই এখন বিপদে। কোন কিছু নিয়ে বড়াই করবেন, মুহূর্তের মধ্যে কিছুই থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা আলেম-ওলামাদের পক্ষে, মুসলমানদের পক্ষে, ইসলামের স্বার্থের পক্ষে কাজ করবো। যারা আমাদের সঙ্গে থাকবে, সমর্থন দেবে তাদের কাজে দেবে। যে বিরোধীতা করবে সে তার মতো করুক, আমরা এগিয়ে যাবো। কারণ কোন কিছু উপর থেকে চাপিয়ে দিলে হয় না, তৃণমূল থেকে আসতে হবে। আলেমগণ ছাড়া সমাজের গভীরে এমন সম্পৃক্ততা অন্য কারো নেই। আলেম-ওলামাদের নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, জানতে হবে। আধ্যাত্মিক শিক্ষা-চিন্তা-চেতনায় ফিরে আসতে হবে। আগামী দিনে যারাই ক্ষমতায় থাকবে তারাই সমাজকে সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন। এটা করতে গেলে রেডিমেট ফোর্স হিসেবে আলেম-ওলামা ছাড়া আর কাউকে পাবে না। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কিছু নেই, যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা ঝরে পড়বে। আমাদের সবকিছু ঠিক আছে। সামনে অনেক সুদিন আছে, আমরা সম্মানের সাথে থাকবো। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তুরস্ক থেকে মধ্যপ্রাচ্য রাশিয়া পর্যন্ত সমস্ত মুসলমান দেশগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, বিপুল সম্পদের মালিক মন্তব্য করে জমিয়াত সভাপতি বলেন, তুরস্কে এরদোগান মাদরাসা শিক্ষিত, কোরআনের হাফেজ উনি প্রথম যে ক্যাবিনেট করেছিলেন সেখানে ১২ জনকে রেখেছিলেন যারা একই ধারার মাদরাসা শিক্ষিত। কামাল আতাতুর্করা দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে সমাজটাকে নষ্ট করে দিয়েছিলেন, ইউরোপ-আমেরিকা বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, আধুনিকতার নামে, ইসলাম বিদ্বেষী, মুসলমান বিদ্বেষী, ইউরোপের সঙ্গে মিল রেখে বেহায়া-বেলাল্লাপনা প্রতিযোগিতা করে সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন, সেখানে আলেম-ওলামাদের নিয়ে নতুন সমাজ তৈরি করছেন এরদোগান। অটোমান সা¤্রাজ্য আলেমদের সঙ্গে নিয়ে বিস্তার করেছেন। একইভাবে ইরানে শাহ’র নেতেৃত্বে বেহায়া বেলাল্লাপনার তুঙ্গে ছিল। আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে এখন নতুন সমাজ বিনির্মাণ করা হয়েছে। ইসলামী সমাজ তৈরি করেছেন। ইরাকেও এক সময় সে অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
সামনের দিনে মুসলমানরা নেতৃত্ব দিবে আশা প্রকাশ করে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, জাতিসংঘসহ জনসংখ্যা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা বলছেন, এই শতাব্দির শেষে মুসলমানদের সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে জাপান, কোরিয়া, ইতালি, জার্মানী, রাশিয়া, ইউরোপে কমে যাচ্ছে। আমেরিকায় শেতাঙ্গরা কমে যাচ্ছে। আবারো অটোমানদের উত্থান দেখা যাচ্ছে, এরদোগানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা এলাকায় তার প্রভাব বলয় তৈরি হচ্ছে। এখানকার জামায়াত ও উগ্রবাদীরা যারা সউদী আরবের অর্থে দীর্ঘদিন যাবৎ আরেক ধরণের রাজনৈতিক সমাজ চিন্তা করে আসছিলেন তারা এখন হঠাৎ করে দেখে তাদের পেছনে কেউ নেই। সউদী আরবের বিন সালমানকে সমাজ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ত্বরিকা-তাসাউফের পক্ষে যারা কাজ করেছেন তারা এখন বাধাহীনভাবে সেখানে কাজ করতে পারছেন। সালমান এসে প্রতিষ্ঠিত আলেমদের ডাকেন, সকলে সহযোগিতা করেননি। যারা করেননি, একেবারে উগ্রমনোভাব দেখিয়েছিন তাদের বিরুদ্ধে ইসলামী ও রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। যেসমস্ত আলেমরা মানুষের পক্ষে কথা বলেন, মানুষের বর্তমান সময়ের চাহিদা কি? পরিবর্তিত ধ্যান-ধারনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কাজ করছেন।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আলেমগণ যদি এমন অবস্থা তৈরি করেন যে ইসলাম খুব কঠিন বিষয় তাহলে মানুষ দূরে সরে যাবে। এই প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এজন্য তাদের আরো বেশি পড়াশুনা করতে হবে, মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা বুঝতে হবে।
এসময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা কবি রূহুল আমীন, খান, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবুজাফর মো. ছাদেক হাছান, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এইচএম আনোয়ার মোল্লা, ফরিদগঞ্জ রামদাসেরবাগ আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মিজানুর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন- চান্দ্রাবাজার নূরীয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এটিএম মোস্তফা হামিদী, বিষ্ণুদী ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দীন, অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন, অধ্যক্ষ মো. আতাউল করিম মুজাহিদ, অধ্যক্ষ মো. জিল্লুর রহমান ফারুকী, অধ্যক্ষ আবুল হাসান মো. ছাইফুল্লাহ, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলাউদ্দিন মিয়া, অধ্যক্ষ হারুনূর রশিদ মিয়া, অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মো. মাসুম বিল্লাহ মজুমদার, অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান, অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম, অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যক্ষ মো. মনির হোসেন, অধ্যক্ষ একেএম গোলাম মোস্তফা, অধ্যক্ষ নূরুল আলম মজুমদার, অধ্যক্ষ মো. ইউসুফসহ চাঁদপুর জেলা ও জেলাস্থ উপজেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ।